লেখা:Mohasina moni(আমি পাঠিকা)
.
--কিরে তুই বাইরে যাচ্ছিস? ব্যাগটা নিয়ে যা।চট করে বাজারটা দিয়ে যা। তোর বাবার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।
-- এখন জরুরী কাজ আছে পারবো না। গেলাম।
মাহিমের যাওয়ার পথের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকেন ওর মা।ছেলেটা তো এমন ছিল না! ওর বাবার কাছ থেকে জোর করে ব্যাগ নিয়ে বাজার এনে দিতো বাপের কষ্ট হবে ভেবে। আজ শরীর খারাপ জেনেও চলে গেলো!
........
---এই যে , জান পাখি!
--- চুপ! এতো দেরি হলো কেন?
-- দেরী কোথায়? ১০মি: , দেরী হবে তাই মাকে বাজারটা পর্যন্ত করে দিলাম না!
--- ও তাই! তুমি খুব ভাল বাবু। চলো কোথাও যাই। আজকে বেশ গরম পড়েছে ঠান্ডা কিছু খাই চলো...
পকেটের কথা ভেবে আতঁকে উঠলো মাহিম
-- ইয়ে মানে, এখানেই বসি?
--- উহু , চলো ঐ দোকানটায় গিয়ে আগে ঠান্ডা কিছু খেয়ে আসি।
--- চলো তবে ১০০টাকার মধ্যে
--- তুমি খুব কিপ্টা, এতো কিপ্টামি করলে প্রেম করতে পারবা না।
--- তুমি তো জানোই আমাদের অবস্থা, বাবা সৎ মানুষ তাই বেশি টাকা আয় করতে পারেন না। সংসার কোন মতো চলে, আবার আমার পড়ার খরচ।
--- চুপ করো তো! এসব কথা আমাকে শুনিয়ে কোন লাভ নেই। মোবাইলে টাকা নেই , ১০০টাকা লোড দিও।
..........
অফিসের জন্য বের হলেন মাহিমের বাবা প্রতিদিন পায়ে হেটেই বাসে উঠেন কিন্তু আজ শরীরটা ভাল নেই তাই রিকশায় যাবেন বলে ঠিক করলেন, কিন্তু পকেটে হাত দিয়েই চমকে গেলেন! ১০০টাকা ছিল, এখন নেই! মাহিম নিয়েছে? কিন্তু ও তো কখনোও না বলে টাকা নেয় না! তবে একটা ব্যাপার খটকা লাগছে গত তিন মাসে ওর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায়দিনই একশো দুইশো টাকা চেয়েছে এটা ওটা বলে।
নাহ ব্যাপারটা নিয়ে ওর মায়ের সাথে আলাপ করতে হবে!
.........
--- হ্যালো জানু, হ্যা। মনে আছে মানে? তোমার বার্থডে আমি ভুলে যাবো?
কি গিফট করবো? দামি কিছু অবশ্যই
মাহিমের মা ডাকছে, আয় বাবা খেয়ে যা , কতক্ষন বসে থাকবো , তুই না খেলে যে আমি খেতে পারছি না...
--- চুপ করো তো! বেশি বকবক করো না
---- আরে না জানু তোমাকে বলিনী, মাকে বলেছি।তোমাকে কি আমি ধমক দিতে পারি? হুম কোনদিন না, একদমই কষ্ট দিব না।
যেই ছেলে মাথা তুলে কথা বলতো না সে আজ এমন করে কথা বললো? কিছু একটা আছে এর মধ্যে ওর বাবা আসুক.......
......
কি করি? টাকা কোথায় পাই? একটা দামি কিছু দিতে তো অনেক টাকার দরকার ।হাতে আছে ৫০০টাকা ।মায়ের কানের দুল বিক্রি করে ১২০০০ টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু এই তিন মাসে তো প্রায়টাই শেষ! আজ ৫০০টাকা দাও, কাল বিরিয়ানি, জুস আইসক্রিম খাও এই করতে তো টাকা শেষ। কোনদিন মোনা জানতেও চাইলো না ' তোমাদের অবস্থাতো বেশি ভালো না এতো টাকা কোথায় পাও? ' ও যেন চুরি করে টাকা আনতে আরও উৎসাহো জোগাচ্ছে।
----
-- এই যে এতক্ষনে এলে! তোমার জন্যই তো অপেক্ষা করছি।
--- কেমন আছো মোনা? এই যে তোমার গিফট। আর সব চেয়ে বড় গিফট আমি তোমাকে খুব খুব ভালবাসি।
--- কই দেখি? এটা কি? আমি ভেবেছিলাম গোল্ডের কিছু আনবে। ছি! তুমি এতো ছোটলোক!
বলেই ৫০০ টাকা দামের সুন্দর শো পিসটা ছুড়ে মারলো। যাও ছোট লোকের বাচ্চা ছোটলোক। আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগ করবে না। বলে হনহন করে চলে গেলো মোনা। আর মাহিমের যেনো চোখ ফেটে পানি বের হয়ে যাচ্ছে।
কোনরকমে টলতে টলতে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।
একটু পড়েই ওর মায়ের ডাক শোনা গেলো
---- আয় বাবা খেয়ে যা
কেন জানি এই আদর মাখা ডাক শুনতে পেয়ে ভেতর থেকে হুহু করে কান্নারা ছুটে এলো। কান্নার শব্দে ওর মা ছুটে এলো
--- কি রে বাবা, লক্ষি সোনা মানিক আমার বল কি হয়েছে তোর?
--- মা আমাকে মাফ করে দাও। আমি এক মহা ভুল করে ফেলেছি।
--- বোকা ছেলে আয় আমার বুকে আয়।
মাহিমকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ওর মা। কপালে চুমু খেয়ে বললো, সব ভুলে যা বাবা, আমি আর তোর বাবা তোর কোন কষ্ট দেখতে চাইনা।
মাহিম বুঝতে পারলো পৃথিবীর সব প্রেমই মিথ্যা কেবল মায়ের এই ভালবাসাটাই সত্যি। এতো শান্তি এত সুখ পৃথিবীতে কি আর থাকতে পারে?
0 comments:
Post a Comment