Tuesday, 19 April 2016

আমাদের আতাচাচা




গোলাম, মরে গেছিরে-- আমাকে মেরে ফেলল রে—” চিৎকার করতে করতে উঠানে ছুটে আসলেন আতাচাচা নাম আতাউর রহমান হলেও সবাই আতা নামেই চেনে গোলাম রহমান আমাদের গনিতের শিক্ষক সকালে প্রাইভেট পড়ছিলাম সবাই দৌড়েগিয়ে ধরলাম, বাহুদিয়ে রক্ত পড়ছে, থরথর করে কাঁপছে সারা দেহ
কি হয়েছে চাচা?”
আর কি হবে! ওই হারামজাদির কাছে শোন-- বিয়েরসময় কি কাবিনে লেখাছিল যে-- ওকে বাজারকরে খাওয়াতে হবে?”
স্যারের ঘরের নিকটতম প্রতিবেশী চাচা ওদিক থেকে চাচীর বিকট চিৎকার-গালাগাল শোনা যাচ্ছে তাড়াতাড়ি করে গাঁদাফুলের পাতা দাঁতেপিষে ছেড়া পুরানোকাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করা হলবটির কোপ, বেশ ভালোমতই লেগেছে সংসারকি আমার একার?বিয়েকি আমি একা করেছি? সমান-সমান, ওর খাওয়া খাবে;আমারটা আমিওরে-- টাকা কামাসতো আমার বাপের জমিদিয়েই, তোর বাপের জমিতেকি আমি যাই? আল্লাহ বিচার করিস---” কাতরস্বরে বলে চললেন
চাচা জীবনে কোনদিনই বাজারে যাননিবারোমাসই দিনমজুরী দিতেন তাদেরকেই-- যারা তাঁকে তিনবেলা খেতে দিত ভোরে চলে যেতেন, আসতেন রাতের খাওয়াসেরে চাচী বাড়ীতে তরিতরকারী, হাস-মুরগী পুষে তা বিক্রিকরেই দিন চালাতেন কিন্তু তেল,নুনতো আর বাড়ীতে হয়না! একে-ওকে দিয়ে হাট করালেও সবদিনতো আর পাওয়া যায় নাবিপত্তি ওখানেই
তবে হ্যা, একবার তিনি গ্রামের বাইরে গিয়েছিলেন!আমাদের গ্রামথেকে ১০ মাইল দুরের ইউনিয়নবাহিরগ্রামএর বাজারের ফুটবলমাঠেএকটি ক্লাব তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১৬দলের ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ফাইনালে এসে যে দুটোদল টিকে ছিল তারা দুইজেলারফলে প্রতিযোগিতা গড়িয়ে গিয়েছিল জেলা-জেলা পর্যায়েচাচার গ্রামেরক্লাবসৃজনীসংঘ ফাইনালে প্রতিযোগি
খেলতে যাওয়া, দেখতে যাওয়া, সমর্থক হওয়ার এক মহা-আয়োজন
বাস, লঞ্চ, ট্রলার ফ্রি--যাওয়ার জন্য উঠতি-বয়স থেকে বুড়ো, সবাই যাচ্ছে চাচাও যোগ দিলেন চ্যম্পিয়ন হয়ে মিছিলসহকারে মহানন্দে টেলিভিশন নিয়ে ঘরেফিরল সব উৎসবের জোয়ারে ভাটা আসতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে গেল চাচা ফুটবলপ্রেমী হয়ে উঠেছেন তখন ইতালিতে বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে এলাকার একমাত্র টেলিভিশন স্কুলবারান্দায় বসানো হয়েছে সামনের খোলামাঠে হাজারো লোকের সাড়ম্বর উপস্থিতিআমাদের রানারআপ এমপি, সমাজপতি, দলপতি, চেয়ারম্যানসহ সবপর্যায়ের লোকের মিলনমেলা যেন গোলামস্যারও আছেন
চাচাও এসেছেন, পেছনের দাড়ানো-লোকের ভীড়ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখছেন কয়েকমিনিট পর পাশেদাড়ানো মিন্টুকে বললেনতোদের এই ছোটবাক্সের মধ্যে খেলা দেখে পরতায় হয়! এই মিন্টু, খেলা কোথায় হচ্ছে রে?”
চাচা, খেলা হচ্ছে ইতালিতে
কাল কি খেলা আছে?”
আছে
তাহলে বাক্সের মধ্যে দেখে লাভ নেই, কাল মাঠে গিয়ে দেখব
আশেপাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠলএই হাসছিস কেন?
চাচা, সে--তো অনেক দুর, বিদেশ--- বিদেশ-”
অই ব্যাটা বিদেশ হোক আর যেখানেই হোক যাওয়া যাবেনা কেন? ভাবছিস চিনব না! আরে, বাহিরগ্রামের ওপাশে তো আর না! ওর ওপাশেতো আর গ্রাম নেই!”
সকলে আরো জোরে হো হো করে হেসে উঠল!
সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ, পৃথিবীসহ সকল সৃষ্টিকে নিজের জ্ঞানের পরিধির মধ্যেই বিবেচনাকরা লোকটিই সকলকে ধমক দিয়ে বললেনআমারে বলদ পাইছিস্? এই মিন্টু, কথা কস না কেন? তোর ভাই যে ভোটে জিতে চেয়ারম্যান হইছে ওইটা কার ভোট? আমি না দিলে কি হতে পারত? তোদেরকথা বাদই দিলাম, অই-- এমপি হইছে কার ভোটে? , কথা কচ্ছিস না কেন?
খেলাদেখা বাদ দিয়ে সবার মনোযোগ চাচার দিকে নিশ্চুপ সবাই, গোলামস্যার কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলেন ভাবছেন—“ অসীম-জ্ঞানন্ডারের মাঝে নিজের অবস্হান কতটুকু তা আমরা কেউই দেখিনা সবকিছুকেই নিজ-জানার সীমারমধ্যেই পরিমাপ করি মৌলিক অধিকার কি তাই বুঝতে যাদের গলদঘর্ম, তারাই নির্বাচিত করি আইনপ্রণেতা জাতিয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য ! চাচা-আমি-আমরা সবাই একই! কি অদ্ভুত সাম্য!”
এতক্ষন মাথানীচুকরা সবাই আবার টেলিভিশনমিূখী হলোচাচা তখনও রাগস্বরে বলে চলেছেন
আমি কি বোকা নাকি রে!আমিকি কম বুঝি !”------------

0 comments:

Post a Comment